timesofbangladesh.com
প্রকাশ : ১৭:৫২, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

আলিফ হত্যা : আসামি পক্ষে ওকালতনামা, তোপের মুখে পিপি-এপিপি

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
আলিফ হত্যা : আসামি পক্ষে ওকালতনামা, তোপের মুখে পিপি-এপিপি

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার মামলায় দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের এক সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি)। রাষ্ট্রপক্ষের ওই এপিপি হলেন, নেজাম উদ্দিন। ঘণ্টাব্যাপী তাঁকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগপত্র আদায় করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরেরও পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।

সোমবার (২ নভেম্বর) দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে মহানগর পিপির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, সোমবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার গ্রেপ্তার মো. নুরু এবং মো. দেলোয়ার হোসেন নামে দুই আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন সানজিদা গফুর নামে এক আইনজীবী। সেখানে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নেজাম উদ্দিনের ওকালতনামা ব্যবহার করেন। খবর পেয়ে মহানগর পিপির কার্যালয়ে জড়ো হন সাধারণ আইনজীবীরা। পিপি ও এপিপির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে এপিপির কাছ থেকে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেন তারা।

বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের অভিযোগ, মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়া আলিফ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামিদের জামিনের জন্য তার জুনিয়রকে (এপিপি) দিয়ে আবেদন করিয়েছেন। একজন সরকারি কৌঁসুলি হওয়া সত্ত্বেও গ্রেপ্তার আসামিদের জামিন প্রার্থনা করে তিনি পিপি পদের অমর্যাদা করেছেন। 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘একজন মহানগর এপিপির কালতনামা দিয়ে সানজিদা গফুর নামে এক আইনজীবী ইসকন নেতা চিন্ময়ের দুই অনুসারীর জামিন শুনানির জন্য দরখাস্ত দিয়েছিলো। যখন আমরা সাধারণ আইনজীবীরা মিলে প্রতিবাদ করেছি তখন তিনি আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিয়োগকৃত একজন আইনজীবী হয়ে এপিপি নেজাম উদ্দিন কিভাবে ওকালতনামা দেয়? উনি মহানগর পিপি মজিবুল হক ভূইয়ার জুনিয়র। তারা একসাথেই বসে। আর আবেদনকারী সানজিদা গফুর নামে ওই আইনজীবী এপিপি নেজাম উদ্দিনের জুনিয়র। ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের ভাই আলিফ হত্যার আসামিদের জামিনের জন্য মহানগর পিপি নিজেই এটা করিয়েছে। ওনারাই কন্ট্রাক্ট করে জামিন শুনানির জন্য এটা করেছে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরেক আইনজীবী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমাদের আইনজীবী আলিফ ভাইয়ের হত্যা মামলার আসামিদের জামিন শুনানির জন্য ওকালতনামা দেওয়া সেই এপিপি নিজেই পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরও করেছেন।’

জানতে চাইলে মহানগর আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমি এটা নিজেও জানতাম না। ওকালতনামা কিনেছিল গত ২৮ নভেম্বর। যে ওকালতনামা সে আমাদের দলীয় লোক। আর জামিন আবেদনে যাদের নাম দেখেছেন সে দুজনেই মুসলিম, হিন্দু নয়। এরা আমাদের ডা. শাহাদাত ভাইয়ের কর্মী।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। আর সানজিদা গফুর আমাদের চেম্বারে কাজ করে। আমি জানার পর আজ তার গায়ে হাত তোলা বাকি ছিল। অনেক গালাগালি করেছি আমি।’

মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মজিবুল হক ভূইয়া সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘নেজাম উদ্দিন নিজেই জানেন না তার ওকালতনামা একজন জুনিয়র ব্যবহার করেছিলেন। আর যে দুইজনের পক্ষে জামিন প্রার্থনার আবেদন করা হয়েছিল তারা দুজন ডা. শাহাদাত ভাইয়ের (সিটি মেয়র) পরিচিত লোক। আর দুজনেই মুসলমান। ওই এপিপিকে কিছুই জিজ্ঞেস না করে, না জেনে তার ওপরে অনেকেই চড়াও হয়েছে।'

তিনি বলেন, ‘এখন আদালতের পরিস্থিত একদম স্বাভাবিক। ওই এপিপি বলেছে, সে নিজেও জানতো না। এটার জন্য সে ক্ষমাপ্রার্থী।’

এদিকে, সিভয়েস২৪’এর এই প্রতিবেদকের হাতে সাদা কাগজে স্বাক্ষরিত মহানগর আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিনের একটি পদত্যাগপত্র এসেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর পিপি মজিবুল হক ভূইয়া বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে এসে যখন তারা স্লোগান দিচ্ছিলো এটা তখন লিখিয়ে নিয়েছে ওরা (বিক্ষুব্ধ আইনজীবী)। এটা যারা নিয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে।’
 

জনপ্রিয় সংবাদ