করোনার গ্রাফ বদলেছে, তবুও সতর্কের বার্তা
আতিয়া নওশীন
গেল মাস দুয়েক আগেও করোনার সংক্রমণ হার রেকর্ড গড়েছিল চট্টগ্রামে। মৃত্যুর সংখ্যাতেও অবস্থান নেয় সর্বোচ্চতে। আক্রান্ত-মৃত্যুর এ করোনার তাণ্ডবে অসহায় ছিল স্বাস্থ্য বিভাগও। যদিও সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। সময় গড়াতেই বদলেছে। সংক্রমণ হার ও মৃত্যুর সংখ্যা এখন অনেকটাই নিম্নমুখী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী দুই সপ্তাহ ধরে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ হার যদি পাঁচ শতাংশের নিচে অবস্থান করে, তাহলে সেখানে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়। এমন মানদণ্ড বিবেচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে গেল এক মাসের বেশি সময় ধরেই সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছে, যা সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ পর্যন্তও পৌঁছেছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণের গ্রাফট বদলে গেছে। বর্তমানে শনাক্তের সংখ্যা ও হার দুটোই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতামত, করোনা চলে গেছে— এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সংক্রমণ কমে এলেও স্বাস্থ্যবিধি, মাস্ক ব্যবহার অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। না হয়, ফের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে করোনার সংক্রমণ।
তথ্য অনুসারী, চট্টগ্রামে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৩ এপ্রিল। এদিন নগরের দামপাড়ার এক বাসিন্দার শরীরে শনাক্ত হয় করোনার সংক্রমণ। সেই শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড ১ হাজার ৩১৫ জন পর্যন্ত একদিনে শনাক্ত হয় করোনা রোগী। যা গেল ২৮ জুলাইয়ে রেকর্ড শনাক্ত হয়। শুধু তাই নয়, এ মাসেই সর্বোচ্চ শনাক্তের হারের রেকর্ড গড়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ হার ছিল চট্টগ্রামে। একই সঙ্গে জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ মৃত্যুও দেখে চট্টগ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুর সংখ্যা দশের নিচে থাকলেও জুলাইয়ে এসে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি কমতে শুরু করে গেল আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে। ধীরে ধীরে সেই চিত্র এখন পুরোই বদলে গেছে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সংক্রমণ হার কমে এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে গেল কিছুদিন ধরেই।
এরমধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৪ জন। যাদের তিনজন উপজেলার এবং একজন নগরের বাসিন্দা। এদিনও সংক্রমণ হার ছিল শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। তার আগের দিন এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ, তারও আগের দিন সংক্রমণ হার ছিল শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে সবদিকেই উদাসীনতা চরম পর্যায়ে। এক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটিও এখন আর নেই। সাধারণ মানুষও মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতসহ বাধ্যবাধকতাগুলো মানছেন না। হাট-বাজার থেকে শুরু করে শপিংমল কিংবা গণপরিবহন বা হোটেল রেস্তোরাঁতেও এখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করা হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালেও স্বাস্থ্যবিধি উধাও। একসময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরিমানাসহ দণ্ড প্রদান করা হলেও তারাও এখন আর তৎপরতা নেই। কাজেই এমন পরিস্থিতি আবার বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এটা ঠিক, কিন্তু সংক্রমণ যে আবার আসবে না, তা বলা যাবে না। কাজেই মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি এবং বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যারা এখনও টিকা গ্রহণ করেনি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই আমাদের সংক্রমণ অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। অর্থাৎ এতদিন সামাজিক সংক্রমণের কারণে যে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেত, সেটিও নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘করোনাভাইরাস তার রূপ বারবার পরিবর্তন করছে। যার কারণে এখনও সহসায় মুক্তি পাবে— এমনটি নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি। বরং বারবার চরিত্র বদলানোর কারণে নতুন ওয়েভও আসতে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদের। এই পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখনও কিছু কিছু দেশে তৃতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ শুরু হয়েছে। কাজেই আমাদের দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে, এটা ভাবলে মোটেও চলবে না। বরং এ ভাবনাই বির্যয় ডেকে আনতে পারে। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যেকোন মহামাপরি দীর্ঘদিন ধরেই অবস্থান করে। সুতরাং করোনার সংক্রমণ চলে গেছে এটি ভাবাও উচিত নয়। যদিও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি অংশ টিকা গ্রহণ করে ফেলেছেন। বাকিদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হলে সংক্রমণ এমনিতেই কমে আসবে।’
স্বাস্থ্য সব খবর